মি. সরকার বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক । তার প্রতিষ্ঠানে A, B ও C তিন ধরনের পণ্য প্রস্তুত হয় । প্রতি বছরে মোট উৎপাদন ও বিক্রয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সাথে মিলিয়ে মুনাফাও বাড়ছে । উৎপাদন ও বিক্রয় বিভাগের কাজে মি. সরকার খুশী । কিন্তু একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, A পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রয় যেভাবে বাড়ছে B ও C পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রয় সেভাবে বাড়ছে না । তিনি B ও C পণ্যের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলেন, A পণ্য যথেষ্ট চলার কারণে উৎপাদন বিভাগ ও বিক্রয় বিভাগ একটা পণ্য নিয়েই বেশি ব্যতিব্যস্ত রয়েছে । তিনি ভাবলেন, যদি কোনো কারণে A পণ্যের বাজার পড়ে যায় তবে তিনি বিপদে পড়বেন। তাই B ও C পণ্যের বিক্রয় অবশ্যই বাড়াতে হবে । তিনি চিন্তা করলেন A, B ও C পণ্য তিনটাকে আলাদা আলাদা প্রজেক্ট ধরে নিয়ে যদি প্রতিটা প্রজেক্টের জন্য একজন করে ম্যানেজার নিয়োগ দেয়া হয় তবে প্রত্যেক প্রজেক্ট ম্যানেজার তার পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রয়ের বিষয়ে দায়িত্বশীল থাকবেন। এতে প্রতিটা পণ্য সমান গুরুত্ব পাওয়ায় লক্ষে পৌঁছানো সহজ হবে । তাই তিনি সংগঠন কাঠামোতে পরিবর্তন আনলেন । উৎপাদন, বিক্রয়সহ আগে যে বিভাগগুলো ছিল তাদের ব্যবস্থাপকদের কার্যিক (Functional) ব্যবস্থাপক ঘোষণা করলেন। যাদের কাজ হবে প্রজেক্ট ম্যানেজারগণের ফরমায়েশ ও প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করা। এতে তিনি লক্ষ করছেন যে, প্রজেক্ট ব্যবস্থাপকগণের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে এবং এতে B ও C পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রয় দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । এক্ষেত্রে মি. সরকার যে নতুন সংগঠন কাঠামো গড়ে তুলেছেন তা-ই মেট্রিক্স সংগঠন ।
দ্রব্য ও কার্যভিত্তিক বিভাগীয়করণের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন কাঠামোকে মেট্রিক্স সংগঠন বলে । দ্রব্যভিত্তিক বিভাগীয়করণের ক্ষেত্রে প্রতিটা দ্রব্য ও সেবার জন্য যেভাবে আলাদা বিভাগ ও বিভাগীয় ম্যানেজার কর্মরত থাকে এক্ষেত্রেও প্রতিটা দ্রব্য বা সেবাকে আলাদা প্রজেক্ট ধরে তার জন্য একেকজন প্রজেক্ট ম্যানেজার নিয়োগ করা হয় । অন্যদিকে উৎপাদন, বিপণন, ক্রয়, মানবসম্পদ ইত্যাদি কার্যভিত্তিক বিভাগগুলো একইভাবে কর্মরত থাকে। এক্ষেত্রে কার্যভিত্তিক বিভাগগুলোর ব্যবস্থাপকদেরকে কার্যিক (Functional) ব্যবস্থাপক বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে প্রজেক্ট ব্যবস্থাপকগণ তাদের স্ব স্ব দ্রব্য বা প্রজেক্টের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন । কার্যিক ব্যবস্থাপকগণের কাজ হয় প্রজেক্ট ব্যবস্থাপকগণের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন, বন্টন ও আনুষঙ্গিক কাজে সহায়তা করা । এ ধরনের সংগঠনে সাধারণ বা মহাব্যবস্থাপক কার্যত মেট্রিক্স ব্যবস্থাপক হিসেবে গণ্য হন। তার অধীনে একদিকে থাকে বিভিন্ন কার্যিক ব্যবস্থাপক ও অন্যদিকে প্রজেক্ট বা দ্রব্য ব্যবস্থাপকগণ । এ কারণে একে Two Boss Employees পদ্ধতির সংগঠন কাঠামোও বলা হয়ে থাকে । উভয় ধরনের ব্যবস্থাপকই মহা-ব্যবস্থাপকের নিকট দায়ী থাকেন। উভয়ের পারস্পরিক চেষ্টা, সমন্বয় ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আপনা-আপনি কাজের মধ্যে এক ধরনের গতির সঞ্চার হয় । কার্যক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা মেট্রিক্স ব্যবস্থাপকের কাছে যায় এবং তিনি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এতে মেট্রিক্স ম্যানেজারকে অবশ্যই যোগ্য ও অধস্তনদের ওপর যথেষ্ট প্রভাবশালী হতে হয় । ১৯৬০ এর দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের এ্যারোস্পেস কোম্পানিতে সফল প্রয়োগের মধ্য দিয়ে এ সংগঠন যাত্রা শুরু করে । নিম্নে রেখাচিত্রের সাহায্যে এরূপ সংগঠন কাঠামো তুলে ধরা হলো:
মেট্রিক্স সংগঠনের বৈশিষ্ট্য :
১. এটি হলো কার্যভিত্তিক ও দ্রব্যভিত্তিক বিভাগীয়করণের মিশ্রণ;
২. এক্ষেত্রে দু'ধরনের ব্যবস্থাপক একই সঙ্গে কাজ করে; যথা- কার্যিক ব্যবস্থাপক ও প্রজেক্ট ব্যবস্থাপক;
৩. কার্যিক ব্যবস্থাপকের কাজ হলো প্রজেক্ট ব্যবস্থাপকের চাহিদামতো জনশক্তি, উপায়-উপকরণ ও সেবা সরবরাহ করা;
৪. প্রজেক্ট ব্যবস্থাপক বিশেষ দ্রব্য বা প্রজেক্টের সামগ্রিক দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং যার জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে;
৫. উভয় ধরনের ব্যবস্থাপকদের চেষ্টা ও পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর এরূপ সংগঠনের সফলতা নির্ভর করে এবং
৬. উভয় ধরনের ব্যবস্থাপক একযোগে প্রজেক্ট ম্যানেজার বা সাধারণ ব্যবস্থাপকের নিকট দায়ী থাকে ।
আরও দেখুন...